নেটিজেন- উচ্চশিক্ষার্থে নেটযাত্রা

-আরাফাত সিদ্দিকী

বিশ্বের নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য পড়তে যাওয়া আমাদের দেশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। কিন্তু এ স্বপ্ন ভেঙে যেতে থাকে ভিসা অফিসে ধরনা দিতে দিতে। এ ছাড়াও লাগে মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের সহায়তা। কোন সংস্থা সত্যিই ভর্তি করিয়ে দিতে পারবে, তার নিশ্চয়তা কে দেয়! এত কিছুর পরও যাঁরা পাড়ি দিতে পারেন স্বপ্নের দেশে, তাঁদের মধ্যেও উচ্চশিক্ষা খুব কম শিক্ষার্থীর কপালেই জোটে। তাঁদের বেশির ভাগই উচ্চশিক্ষা গ্রহণের অনেক আগেই ঝরে পড়েন। জীবিকার তাগিদে জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন অড জবে। আর শেষ পর্যন্ত যাঁরা টিকে থাকেন, তাঁদেরও কাজের ফাঁকে এক বছরের কোর্স শেষ করতে সময় লাগে তিন থেকে চার বছর।

এসব শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার চাহিদা পূরণ করতেই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে ইন্টারনেটভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি টুয়েন্টি ওয়ান গ্লোবাল। পৃথিবীর আরও ৬০টি দেশকে সঙ্গে নিয়ে ২০০১ সাল থেকে প্রথম চালু হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশেও শুরু হয় এর পথচলা। যেসব শিক্ষার্থী বিভিন্ন সমস্যার কারণে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে পারেন না, তাঁদের লক্ষ করেই শুরু হয়েছে এ কার্যক্রম। পৃথিবীর নানা দেশের ২১টি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গঠিত এ ইউ২১-এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই পাবে উচ্চশিক্ষার সুযোগ। এতে অনলাইনে শিক্ষার্থীরা নিতে পারবে ব্যবসায় প্রশাসন, এমআইএস ও পর্যটনএ তিনটি বিষয়ে স্মাতকোত্তর কোর্স, পাঁচটি ডিপ্লোমা কোর্স ও করপোরেট প্রশিক্ষণের আওতায় ৭০টি সার্টিফিকেশন কোর্স। যৌথভাবে এসব ডিগ্রী দেবে ২১টি বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে উত্তর আমেরিকার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়, ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, মেক্সিকান বিশ্ববিদ্যালয়, টেকনোলজিকো দ্য মন্টারি, ইউরোপের গ্লাস গো বিশ্ববিদ্যালয়, নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়, এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়, বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিন, লর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়, কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়, অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ার সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়, সাংহাই জিয়াউ টঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, হংকং বিশ্ববিদ্যালয়এবং ওয়েসেদা ইউনিভার্সিটি।

এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য সাধারণত একজন শিক্ষার্থীকে ব্যয় করতে হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার ডলার। কিন্তু অনলাইনে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমমানের কোর্স শেষ করা যাবে ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলারের মধ্যে। অনলাইনে এমবিএ ও এমআইএস কোর্স করতে খরচ পড়বে সাত থেকে দশ হাজার ডলার, বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করা যাবে দুই থেকে সাত হাজার ডলারের মধ্যে, বিভিন্ন সার্টিফিকেশন কোর্স করতে সর্বোচ্চ ব্যয় হবে ৫০০ থেকে এক হাজার ডলার। এ ছাড়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে বৃত্তির সুযোগ।

পেশাবিষয়ক বাংলাদেশী ওয়েব পোর্টাল এইম ইন লাইফ ইউনিভার্সিটি টুয়েন্টি ওয়ান গ্লোবাল বাংলাদেশের জন্য চালু করেছে, জ্ঞান তাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ মেধা বৃত্তি। এ বৃত্তির মাধ্যমে প্রতিবছর দশজন শিক্ষার্থী যেকোনো একটি কোর্স করতে পারবেন বিনা খরচে।সেই সঙ্গে আগামী বছর থেকে নারীদের উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী করে তোলার জন্য শুধু নারী শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্টার কার্ডের সৌজন্যে চালু হচ্ছে নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে মাস্টার্স ইন ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম কোর্সের ওপর ৫০ শতাংশ ছাড় সুবিধা। অনলাইনে এ উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীর ন্যুনতম যেসব যোগ্যতা প্রয়োজন তা হলো, এমবিএ ও এমআইএস কোর্সের ক্ষেত্রে গ্রাজুয়েশন ও আইএলটিএস পরীক্ষায় ন্যুনতম পাঁচ পয়েন্ট, ডিপ্লোমার ক্ষেত্রে এইচএসসি বা সমমান পাসের সনদ। বিভিন্ন সার্টিফিকেশন কোর্সের ক্ষেত্রে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

কেমন হবে এসব কোর্সের সার্টিফিকেটের মূল্যমান?

এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রিয় জবসাইট এইম ইন লাইফের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কমকর্তা এম শোয়েব চৌধুরী জানান, এসব কোর্সের সনদপত্রের মূল্যমান নিঃসন্দেহে বিশ্বমানের। কেননা, ইউনিভার্সিটি টুয়েন্টি ওয়ান গ্লোবালের সঙ্গে যেসব বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তাদের পাঠক্রম আমাদের অনেক আধুনিক ও কার্যকর। এ ছাড়া এখানে শুধু আবেদন করে টাকা জমা দিলেই সনদপত্র পাওয়া যায় না। কোর্স শেষ করতে হলে প্রয়োজন বিশ্বের ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি নির্দিষ্ট সিলেবাসের আওতায় নির্দিষ্ট সময়ের পড়াশোনা। এখানে অনলাইনে সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়ে থাকে। কোনো কোর্সের কোনো অংশ যদি শিক্ষার্থী অনলাইনে বুঝতে না পারে, তাহলে রয়েছে ২৪ ঘণ্টা কলসেন্টারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোর্সগুলোর ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনার ব্যবস্থা। এই গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য আশা করে তিনি বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে এই অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় একটি মাইলফলক হিসেবে স্থাপিত হবে। জ্ঞানভিত্তিক বিশ্বের অর্থবাজারে আমাদের শিক্ষার্থীদের টিকে থাকার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। সেই সঙ্গে প্রতিবছর সাশ্রয় করবে গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক মুদ্রা।

ইউনিভার্সিটি টুয়েন্টি ওয়ান গ্লোবাল’-এ আবেদন করতে বা এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে www.u21global.com ঠিকানার ওয়েবসাইট থেকে। ফোন: ৮৮৩২১০৬।

-সূত্র: প্রথমআলো - প্রজন্ম ডটকম-২৮.০৯.০৭

No comments: